দীপাবলী সংখ্যা
দায়িত্ব
লেখক : বিকাশকলি পোল্যে
নিতাই বাবুর সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হল বিভাসের।সে যখন মজিলপুর আমির আলি হাইস্কুলে ইলেভেন টুয়েলভে পড়ত নিতাই বাবু তখন তাদের পলিটিক্যাল সায়েন্স পড়াতেন।যে কোন কারণেই হোক রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়তে ভীষণ ভালো লাগত তার।তাই বিভাসকে ভীষণ স্নেহ করতেন নিতাই বাবু।শিক্ষকতার পেশা থেকে অবসর নিয়েছেন অনেকদিন।বয়সও হয়েছে বেশ।তাও বিভাসকে এখনও ভুলে যাননি তিনি।রাস্তায় দেখা হলেই স্যারকে প্রণাম করে বিভাস যেমন শ্রদ্ধা জানায় তেমনি নিতাইবাবুও তাঁর এই প্রিয় ছাত্রটিকে স্নেহের পরশে ভরিয়ে দেন তার হৃদয়।
আজ দেখা হতেই নিতাই বাবু জিজ্ঞাসা করলেন,'কেমন আছো বিভাস?'
-'ভালো স্যার,কিন্তু......'
-'আবার কিন্তু কিসের?'
-'না,মানে এত দায়িত্ব!আমি আর সামলে উঠতে পারছি না স্যার।'
-'কেন,কি হয়েছে?'
বিভাস আমতা আমতা করে বলল,'আমার স্ত্রী এখন প্রেগন্যান্ট।ভরা মাস।তার উপর মায়ের এমারজেন্সি হিসট্রেক্টোমি করাতে হবে।বাবার হার্টের সমস্যা ধরা পড়েছে।হাই ব্লাড সুগার।সব দায়িত্ব আমার উপরেই।'
-'কেন তোমার অন্য ভাইরা?'
-'অন্যান্য ভাইরা কেউই দায়িত্ব নিচ্ছে না।'
-'আর বোন?তোমার তো একটিই বোন?'
-'হ্যাঁ।বোনের কথা ছেড়ে দিন।তার তো আলাদা সংসার।'
-'তোমার অন্য দুই ভাই কি করে?'
-'মেজো ভাই ব্যাবসা করে।আর ছোট ভাই করপোরেশনে চাকরি করে।তাদের ভালো রোজগার।বউ বাচ্চা নিয়ে আলাদা থাকে।মা বাবাকে কাছে রাখার প্রসঙ্গ উঠলেই তাদের মুখ শুকিয়ে যায়।মেজো ভাই বলে তার ব্যাবসার অবস্থা ভালো নয়।ছোট ভাইও নানা অছিলায় বাবা মাকে কাছে রাখতে চায় না।যে যার মতো দূরে সরে থাকে।'
মাস্টারমশাই ক্লাসের এক নম্বর ছাত্রের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,'দেখো বাবা,এই জগৎ সংসারে ভগবান সবার উপরে সব দায়িত্ব দেন না।যে দায়িত্ব নিতে পারে একমাত্র তার হাতেই তিনি দায়িত্ব দেন।তিনি অন্তর্যামী।তুমি দায়িত্ব নিতে পারবে জেনেই ঈশ্বর তোমার উপর এই গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন।তুমি শুধু ওনার কাছে প্রার্থনা করো তিনি যেন এই সমস্ত দায়িত্ব পালনের জন্যে তোমাকে শক্তি দেন।তোমার মনে নেই বিভাস রবি ঠাকুরের সেই গানটা,বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা.। আজ আসি বাবা।ভালো থেকো।ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করবেন।তুমি দেখো।'
বিভাস হাঁ করে মাস্টারমশায়ের হেঁটে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। এখন তার মনে সমস্ত অন্ধকার ও জটিলতা দূরে সরে গিয়ে ফুরফুরে দখিনা বাতাস বয়ে যেতে লাগল।