মাছধরা
লেখক : চ ন্দ্র শে খ র চ ক্র ব র্তী
কেরামতের মাছ ধরার শখ ছোটোবেলা থেকে। বছর কয়েক হল শহরে বাবুর্চীর কাজ করে। গ্রামে আসা হয় না। এবার বর্ষা নামতেই বোনের বিয়ে উপলক্ষে গ্রামে এল। গ্রামে মাছ কিনে খাবার চলন এখনও হয়নি। ঘরে অথিতি, কেরামত ঠিক করল রাতে নতুন বিলের বাঁধের ধারে ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ ধরতে যাবে। জোয়ান মরদ কেরামত, আবলুস কাঠের মতো গায়ের রং, পাথরে খোদাই রা মূর্তির মতো চেহারা। গায়ে যেমন জোর মনেও তেমনি। ভয় কাকে বলে জানে না। অমাবস্যার আগের রাত। গাঢ় অন্ধকার। একটা টর্চ অর ঝাঁকি জাল নিয়ে ডিঙ্গিতে চেপে বসল কেরামত। বাড়ির লোকেরা বলল, ‘‘আকাশে ঘন কালো মেঘ, মাঝে মঝে বৃষ্টি পড়ছে এমন রাতে একা একা যাওয়া ঠিক নয়। রাস্তা ঘাটে পের সাপের উপদ্রব তো আছে। কেউ আবার বলল সাপে না কামড়ালেও ভূতের ভয় কী নেই?’’
কেরামতকে আটকানে কারো সাধ্যি নয়। ভরা নদী, সে পাড় দিয়ে ওপরের খেয়াঘাটে ডিঙি টেনে অনেকটা উত্তরে সে চলল বিলের বাঁধের দিকে। নদীর পাড় ধরে হেঁটে একটু এগুতেই আলাউদ্দিন চাচার সঙ্গে দেখা। বহু বছর আগে থেকেই আলাউদ্দিন চাচার নাম ডাক ও শুনেছে। এর মতো মাছ ধরার ওস্তাদ নাকি তল্লাটে নেই। দু একবার আলাউদ্দিন চাচার কোচে গাথা বোয়াল মাছের আকার দেখে অবাক হয়েছে। সেই আলাউদ্দিন চাচা তার সামনে জর্দা পান খেয়ে বিচিত্র বর্ণের রঙিন দাঁতের হাসি ফুটিয়ে উপস্থিত। তর ধবধবে মাথার চুল দাড়ি আর টকটকে লাল চোখ দেখে একটুও ঘাবরে না গিয়ে কেরামত বলল, ‘‘কী চাচা কেমন আছেন?’’
---খুব ভালো। তা ভাইপো কোথায় চললে?
---বাড়িতে ইত্তি কুটুম তাই মাছ ধরতে বেরিয়েছি।
---তুমি কোথায় চললে?
বৃদ্ধ আলাউদ্দিন বলল, ‘‘জানতো মাছ হল আমার জান। অজ যেমন বৃষ্টি পড়ছে এমন বৃষ্টিতে অনেক বড়ো মাছ ডিম ছাড়ে। আমি ঘুরে ঘুরে সেই মাছ খুঁজে বেড়াচ্ছি।’’
---ঠিক আছে তুমি মাছ খোঁজ আমি যাই বাঁধের ধরে।
---আরে আমিও যাব। চল তুমি তো এখন গ্রামে থাক না। এখন খাল বিলের চেহারা পালটে গেছে। আমি তোমাকে দেখিয়ে দেব কেথায় জাল ফেললে মাছ পাবে।
মনের আনন্দে কেরামত আলাউদ্দিনের সঙ্গে বাঁধের পাশের বিলে উপস্থিত হল।
আকাশের রঙ যেন ক্রমশই নিকষ কালো হয়ে হতে লাগল। দু হাত দূরের কিছু ভালো করে দেখা যায় না। কেরামত টর্চের আলে ফেলছে তুব বৃষ্টির ছিটায় টর্চের কাঁচ ভেদ করে আলো ধূয়াসার মতো হয়ে যাচ্ছে। আলাউদ্দিনের চলার শধে সে তকে অনুসরণ করে জলে নামতে লাগল। অনেকটা জলে নেমে কেরামতের খেয়াল হল এত জলে নেমে জাল ছুঁড়বে কী করে। সে আলাউদ্দিনকে বলল, ‘‘চাচা আর জলে নেমে কী করে জাল ছুড়ব?’’
আলাউদ্দিন বলল, ‘‘একটু এগিয়ে একটা ঢিবি পাবে, সেখানে উঠে জল ছুড়বে।
কেরামত আর একটু এগুতেই জলের স্রোতে ভেসে যেতে লাগল। সে চিৎকার করে বলে উঠল, ‘‘চাচা কোথায় ঢিবি আমিতো ভেসে যাচ্ছি জলের সাথে। তার কানে এল একটা তীব্র হাসির ফোয়ারা।
কেরামত যখন চোখ মেলল, তখন সে এ জেলে ডিঙিতে শুয়ে আছে। জেলেরা বলল, কাল রাতে বানের জলেতে ভেসে যাচ্ছিল জেলেদের জালে সে আটকে থাকায় ওরা উদ্ধার করতে পেরেছে।
খবর পেয়ে কেরামতের বাড়ির লোকের এল। কেরামতের মুখে আলাউদ্দিন চাচার কথা শুনে বলল, ‘‘সে কী কথা আলাউদ্দিন চাচাকে কে বা কারা এক বছর আগে বিলের ধারে কোচে গেঁথে মেরে ফেলেছে।’’