শাঁখিনী
লেখক : নির্মল বর্মন
দীঘার কাছে বিয়ে বাড়ি যাওয়ার কথা ভাবতেই দুরমুঠ নামক মৌজা যাওয়ার সম্ভাবনা খুলে যেতেই মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেল৷ দুরমুঠ মৌজায় বটদিঘি নামক জায়গাতে শাঁখিনী নামে ভয়ানক পেত্নী ঘুরে বেড়ায়৷ কিন্তু বিষয়টি বন্ধু সৌগতকে বলতেই চেঁচিয়ে বলেছিল পেত্নী না পাঁস৷ নিশ্চয়ই লোকের কাজ৷ সৌগত যাই বলুক না কেন কিন্তু ওখানে গিয়ে নজর কেড়েছে সত্যিই বটদিঘিতে শাঁখিনী আছে৷
তূনীর ভূতকে ভয়৷ শুধু ভূতকে কেন অনেক কিছুতেই লজ্জা ও ভয় করে! সৌগতর মতো সাহস তূনীরের নেই, তাই সৌগত রহস্যের গন্ধ পেয়ে যখন বটদিঘি যেতে সম্মতি দিলেন তখন তূনীর উল্লসিত ঠিক তেমনি পাশাপাশি শঙ্কা দ্বন্দ্ব জেগেছিল সত্যিই শাঁখিনী পেছনে ছোটাছুটি করতে পারে কি?
বাসে যেতে হঠাৎ ভাবনায় এসে গেল বট দিঘির কথা, চোখের সামনে ভাসছে শাঁখিনীর কথা, শাঁখিনীর বাসস্থানের কথা, রাতের বেলা দূরের কথা দিনের বেলায় কেউ পা মারাতি সাহস পান না বট দিঘির পাড়ে ঝুপসি কয়েকটি গাছ৷ সেখানে চম্পা নামক এক বেকার অকালকুষ্মাণ্ড সান্টুর বৌ গলায় দড়ি দিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিল৷ এখন শাঁখিনী হয়ে ওই গাছগুলোতে বসবাস করে মাঝে মধ্যেই সংশ্লিষ্ট গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়৷ কখনোই সখনো পুঁ পুঁ করে শাখ বাজায় আর হি হি হি করে হাসিতে ফেটে পড়ে৷ কথাগুলো ভাবতেই বুক ধড়ফড়ানি শুরু হয়ে গেল৷
বটদিঘি জায়গাটি বেশ নির্জন একবার সৌম্যর সাথে তূনীর ওখানে গিয়ে ছিলেন৷ দুরমুঠ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় পৌনে এক কিঃ মিঃ দূরে এই বটদিঘি৷ দুপাশে বিস্তৃত ধু ধু মাঠ ঘেরা দুটি গ্রাম৷ দক্ষিণ দিকে বেতালিয়া উত্তরে গয়াগিরি৷ মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতোই বরদিঘি নিকষ কালো টলটলে জলে ভরপুর কিন্তু রাস্তা থেকে দেখা যায় না৷ চারপাশে কুটুস আর আর্টারি গাছে ঝোপঝাড়, বাদাম ও নিম গাছের সমারোহ, সব ছাড়িয়ে ঘাটের পাশেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে দেবদারু৷ সৌম্য দশটার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলেছিল ওই গাছে থাকে শাঁখিনী, গাছের দিকে তাকিয়ে বুক ধড়পড় করছিল তূনীরের৷ দিনের বেলায় কেমন যেন গা ছমছম ভাব, সত্যিই কি পাতার আড়ালে শাঁখিনী৷
সৌগত যতই বলুক ভূত বলে কোনো গাড়োল নেই, অবশ্য বটদিঘি কোনোদিন যাননি সৌগত৷ তূনীর অনেকবার ওখানে গিয়েছে সাধারণ মানুষের সাথে কথাও বলেছে৷ সৌগত বলেছিল ভূত নয় নিশ্চয় দুষ্টু লোকের কারসাজি কিন্তু ওখানে যাদের ভূতে পেয়েছিল তারা নাকি অদ্ভুত আচরণ করে৷ শরীরে ক্ষমতা বেড়ে যায় বাট বাঁচেনা বেশিদিন৷ সৌগত মালবোরোতে সুখ টান দিয়ে হেসে উড়িয়ে দিচ্ছে আর বলছে কোথায় পড়ে আছিস পম্পা, এই কম্পিউটারের যুগে এসব বিশ্বাস করতে নেই৷ দীঘার কাছে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার রাস্তায় দুরমুঠ বাস স্টপেজ নেই তাই দূর থেকে তূণীর বলল ওই দেখ সৌগত ওটাই দুরমুঠের বটদিঘি৷ সৌগত বলল দারুণ ধানখেত মাঝখানে বটদিঘি৷ সৌগত বলল বটদিঘি কি দেখতে পাবো না রাস্তা থেকে?
পাবে তবে দূর থেকে৷ মনি মা বলল ওসব ভূত-প্রেত বাহাদুরি মাথা থেকে নামা৷ সৌগত বেশ জোরে হেসে বললো তুমিও বেশ মণিমা, ‘আজকাল কেউ ভূত-প্রেত গাড়োল বিশ্বাস করে, মোবাইল, কম্পিউটার,মিশাইলের যুগে’৷ যতই আধুনিক যুগ হোক না কেন এখনো অনেক কিছু ঘটে এই আধুনিক পৃথিবীতে যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান নেই৷
মণিমার কথা শেষ হতেই সৌগত বললো ‘ওসব যা কিছু ভূতুড়ে আজগুবি কাণ্ডকারখানা ঘটে তার পেছনে রহস্য বিরাজমান, ওসব মানুষ ভূতের কাজ করে’৷ নারে সৌগত, বট দিঘিতে দুজনকে শাঁখিনীতে পেয়েছিল৷ সৌগত অবিশ্বাসের সুরে বলল ‘কিছু একটা রহস্য আছে, ওরকম মনে হয় মণি মা৷ তুমি গোয়েন্দা গল্প পড়লে বুঝতে পারবে,তেমনি ম্যাজিক দেখে মনে হয় একটা মন্ত্রের কারসাজি’৷ সৌগত ক্ষুরধার যুক্তিতে মণিমা ক্ষণিকের জন্য কথা হারিয়ে বলল ‘তোদের সাথে তর্কে পেরে ওঠা মুশকিল, তবে ওখানে দস্যিপনা করিস না’৷ নানা ঝুট-ঝামেলা আর কথাবার্তার মধ্যেই সবাই রূপসী বাইপাশে নেমে পৌঁছে গেলেন দুরমুঠ৷ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চাষাবাদ৷ সৌগত মাসির বাড়ি পুরনো আমলের দোতালা বনেদি বাড়ি৷ জীর্ণের মধ্যেও আভিজাত্যের ছোঁয়া৷ সৌগতকে দেখে বিষ্ণুপদ দৃষ্টি ঘুরিয়ে বললো যাক তাহলে তুমিও এসেছ না এলে আমি বিয়ের পিঁড়িতে বসতাম না বশ৷ সৌগত বললো এইজন্য ছুটে এসেছি যাতে তোমার বিয়ে ভন্ডুল না হয়৷ সৌগতর গার্লফ্রেন্ড পম্পা৷ পম্পা দত্ত একটা বিদ্যালয় অঙ্কে কষান৷ কবিতা সাহিত্য নিয়ে চর্চাও করেন৷ সৌগতর খুদে গোয়েন্দা গিরি সম্পর্কে অল্প বিস্তর খবর রাখেন৷ পম্পা দত্ত সবাইকে বললেন দুরমুঠে কিছু মিশন টিশন কিছু আছে নাকি৷ নাকি পেট পুজোর আয়োজন চলছে৷