দীপাবলি সংখ্যা
স্বপ্নের ঘর
লেখক : জুঁই (যুথিকা তরফদার)
এখন সবাই পাগলী বলে অথচ ঠিক এক বছর আগে এখানে আলোর রোশনাই আর সানাইয়ের সোহাগে সারা বাড়ি ভরে উঠেছিল। লাল বেনারসিতে শিউলি এসেছিল শ্বশুরঘরে। কিন্তু বাসর ঘরে শিউলির বরের পেটেব্যথা উঠেছিল হঠাৎই। ডাক্তার ডাকতে হয়েছিল। পরদিন সকালে সবাই শিউলিকে নিয়ে নানা হাসি মশকরা করছিল, যৌবন যার মাত্র শুরু। সেদিনই বিকেলে শিউলির বর বিবেক শিউলিকে নিয়ে জলঙ্গীর ধারে ঘুরতে যায়, সেখানে এক শিব মন্দিরে শিউলি প্রথম যৌবনের খোঁজ পেল।
ঠোঁটের উপর ঠোঁট উপর হলে তাতে কোন মধু ঝরে আর সে গল্প শরীরের কোন আনাচে-কানাচে পৌঁছে কোন মাদকতায় ভরিয়ে নিয়ে যায় শিউলি সেদিন প্রথম টের পেল। পরের দিন বিবেক ফিরে যাবে শহরে কারণ সেখানে সে পড়াশোনা করে। যাওয়ার সময় উঠোনের দরজা থেকে যতদূর দেখা যায় শিউলি তাকিয়ে ছিল। তারপর ঘরে এসে আগের সন্ধ্যার সব স্বপ্নগুলোকে একা একাই সাজিয়ে ছিল। এত সুখ শিউলি কখনো ভেবেছিল! এক সপ্তাহ পর শহর থেকে টেলিগ্রাম এলো বিবেক হাসপাতালে ভর্তি। বিবেকের মা-বাবা শহরে গেল কিন্তু ফিরে এলো প্রাণহীন বিবেকের দেহটাকে নিয়ে।
দেহটাকে নিয়ে স্বপ্নের সাথে ভেসে থাকা মন শিউলির দরজায় সেদিন এঁকে দিল এক দিশাহীন বিষাদের সুর। কেউ জানলো না কিভাবে নিঃশব্দে হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে সমস্ত মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল। শিউলি এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় বাড়িতে এসে সারা উঠোন জুড়ে স্বপ্নগুলোকে খুঁজে বেড়ায়।