অনুগল্প

অনুগল্প ঝিনুক খেলা

ঝিনুক খেলা

লেখক : পিন্টু মাইতি

সপ্তাহ খানেক পরে ঝিনুকের জন্মদিন। সেই আনন্দের সাথে চলছে গরমের ছুটি। মনটাকে আরও খুশিতে ভরিয়ে দিতে বাবা-মা তাঁকে দুদিনের জন্য বেড়াতে নিয়ে চলেছে বালেশ্বরের চাঁদিপুরে। চাঁদিপুরের সমুদ্র সৈকতকে বলা হয় 'সিলভার বীচ'। সকালের ট্রেন হাওড়া থেকে ছেড়ে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে। জানালার পাশে বসে বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছে কেউ জানে না । কারণ মা-বাবাও বসে বসে ঝিমুচ্ছিল। অনেক সকালে উঠে ট্রেন ধরতে হয়েছে, তাই ঝিমুনি আসাটা স্বাভাবিক। আগের দিন অফিস থেকে হাফ ছুটি নিয়ে বাবা গিয়েছিল ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে। গোছগাছ করে একটু ক্লান্তিই এসেছিল তার। এবারের ট্যুরে ঝিনুক তার প্রিয় খেলনা নিয়ে এসেছে। সেটি রাখা হয়েছে একটি স্যুটকেশে। পাঁচ বছরে পা দেওয়া ঝিনুকের সময়ের সাথী হল তার সবচাইতে প্রিয় 'কথা বলা ক্যাকটাস'। ট্রেন ঢুকেছে খড়গপুরে। বাবা কিছু খাওয়ার কিনে এসে সিটে বসতেই ঝিনুক বায়না ধরল স্যুটকেশ থেকে খেলনা পেড়ে দিতে। উপরের বাঙ্কে হাত বাড়াতেই মাথায় হাত। সর্বনাশ করেছে, স্যুটকেশটা তো নেই! তবে কি....? বুঝতে অসুবিধা হল না। সহযাত্রী সকলেই সান্ত্বনা দিতে লাগলেন। খড়গপুর থেকেই কেউ স্যুটকেশটি নামিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছে। খেলনা না পেয়ে ঝিনুকের সে কি কান্না! অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে কিছু হল না। চাঁদিপুরে গিয়ে দোকান থেকে হরেক খেলনা কিনে দিতে চাইলেও ঝিনুক নিল না। তাঁর শুধুমাত্র স্যুটকেসের খেলনাই চাই। একেবারে বিষন্ন হয়ে চাঁদিপুর ভ্রমণ শেষে তারা ফিরে এল বরানগরের বাড়িতে। জন্মদিনের প্রস্তুতি শুরু হল। পুরনো খেলনার কথা প্রায় ভুলেই গেল ঝিনুক। প্রতিবেশী একজন বলে গেলেন দুদিন আগেই একজনকে সন্দেহজনক ভাবে বাড়ির আশেপাশে ঘুরতে দেখেছেন তিনি। সে কথার গুরুত্ব না দিয়ে ঝিনুকের বাবা সকলকে নিমন্ত্রণ করতে বেরিয়ে পড়ল। অবশেষে এল ঝিনুকের জন্মদিন। সন্ধ্যাবেলা তার শোয়ার ঘর জন্মদিনের উপহারে ভরতে লাগল। বাবা তাকে নতুন একটি কথা বলা ক্যাকটাস উপহার দিল ঠিকই তবুও ঝিনুকের মন ভরল না। পুরনো খেলনার জন্য ছটফট করতে লাগল তার মন। পরের দিন সকালে উপহারের প্যাকেটগুলি খুলতে শুরু করল সকলে। কত রকমের গিফট পেয়েছে ঝিনুক। একটি প্যাকেট তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। কেমন যেন অগোছালো । সেটা খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ। এ-কি এ যে চেক বই। একেবারে সই করা অক্ষত ব্ল্যাঙ্ক চেক। ঝিনুকের বাবার খেয়াল নেই লাগেজ গোছানোর সময় বে-খেয়ালে সেটা কাগজপত্রের সাথে স্যুটকেশে ঢুকে গেছে। কিন্তু ওটা কি দেখা যাচ্ছে? আরে এ তো ঝিনুকের স্কুলের আই কার্ড। সব কিছুই আছে, কিন্তু সেই কথা বলা ক্যাকটাসটা নেই । খুশির সাথে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করল ঘর জুড়ে প্যাকেটের মধ্যে থাকা একটি চিঠির সাথে। "আপনাদের স্যুটকেশটা খড়গপুর থেকে নিয়েছিলাম ঠিকই। তখনও জানতাম না এর মধ্যে কি রয়েছে। চোরেদের অনেক আকাঙ্খা থাকে ব্যাগ চুরি করার পর। আপনাদের স্যুটকেশটি খুলে খেলনাটি দেখে আমার মারা যাওয়া মেয়ের কথা মনে পড়ে যায়। আপনার চেক বই আর আপনাদের মেয়ের স্কূলের আই কার্ডে লেখা ঠিকানা দেখে ফিরিয়ে দিয়ে গেলাম সেগুলি। খেলনাটি পুরনো হয়ে গেছে, তাই সেটা ফেরৎ দিলাম না। পারলে আর একটা কিনে দেবেন। খেলনাটির সাথে স্যুটকেশের বাকি জিনিসগুলি স্টেশনের ভবঘুরেদের হাতে তুলে দেব।"

Copyright © 2022 Rupkatha Live. All Rights Reserved. Powered by : Technotrick Systems.