অনুগল্প চড়
বড্ড গরম। ঘরে তার চেয়ে বেশি। সে আবার শীত-গ্রীষ্ম মানে না। সকাল হল কাজের সময়। ঘর মোছা, কাপড় কাচা, খানা পাকানোর ব্যস্ততায় মাথার ভোল্টেজ বাড়ে মানসীর। মুখ ছোটাতে থাকে। গরম সইতে না-পেরে বেরিয়ে পড়ি। চলে আসি স্টেশনে। মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করি।
যেখানে বসি তার পাশের সিট বোঁচকা-বুঁচকি-বিছানাপত্তর নিয়ে সারা বছরই কায়েম করে একটা চির মাতাল ছেলে মাকে নিয়ে থাকে। নেশা যেদিন কম পড়ে সেদিন দুঃখে তো বটেই, বেশি পড়লে আনন্দে রোজই ছেলে মাকে ঠাস ঠাস করে চড় কষায়। মেরে-ধরে একশা করে। মা চিৎকার করে কাঁদে। কিন্তু কারও কাছে হেল্প চায় না।
তাকিয়ে-তাকিয়ে দেখি আর ভাবি আমার মতো দু’চার পিস কাপুরুষ বাদে সবাই বউকে পেটায়। এ মাকে পেটায় কেন রে বাবা! বেটার ইহকাল-পরকাল সব যাবে। মরার পরে স্ট্রেট নরকেই গতি। কেউ আটকাতে পারবে না।
কিন্তু আজ হল অন্য রকম। সকালের ভোল্টেজ কনটিনিউ করছে মানসীর। অশান্তি করে মারছে। বিকেল পর্যন্ত মুখ বুজে সয়ে ‘‘ধুত্তোর!’’ বলে বেরিয়ে পড়লাম সেই স্টেশনেই। গিয়ে দেখলাম অবাক কাণ্ড। আজ রোগা প্যাংলার আনন্দের বিস্ফোরণ হয়েছে। চিৎপাত হয়ে পড়ে হাউ হাউ করে কাঁদছে আর কাঁচা গালাগালির ফোড়ন দিয়ে বলছে, ‘‘মা রে একটা বউ আনি দে! তারে নে শুতে ইচ্ছে কচ্চে। মা রে মা!’’
ছেলের চেয়েও তিন কাঠি পাতলা-হালকা যে মা রোজ ছেলের হাতে মার খায় সেই মা তার মাথায়-বুকে হাত বুলিয়ে বলছে, ‘‘বউ কোদ্দিয়ে আনব রে! আনলে সে কি তোর সাতে শোবে? আমি তো আছি বাবা। বউ তোরে এত ভালবাসবেনি রে পাগল ছেলে!’’
ছেলে বলছে, "জানি! জানি! তাই তো তোরে এত মারি। শালা নরকে যাই যাব। হাতের তো সুখ হয়! তোরে একটা চড় মারি?"
মা গান্ধীজির নারী অবতার সেজে "মার! মার!" বলে আনন্দের সঙ্গে গাল বাড়িয়ে ঝাঁজাল, "নরকের চোদ্দোপুরুষ তোরে ছুঁতে পারবেনি। মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেব না!"
চোখ খুলে গেল আমার। মোবাইল পকেটে পুরে ফিরে এলাম ঘরে। আমাকে দেখেই তেলে-বেগুনে জ্বলে গেল বউ। যা নয় তাই বলতে লাগল। আমি চেয়ে-চেয়ে দেখতে লাগলাম আর চমকে-চমকে উঠতে লাগলাম। ছোটবেলায় স্কুলে যাব না বলে স্কুল ড্রেস লুকিয়ে রেখেছিলাম। মা টেনে বের করে টেনে চড় কষিয়ে বলেছিল, ‘‘স্কুলে না-যাওয়ার মতলব , উঁ? যা স্কুলে!’’
আমি আকুল হয়ে চেয়ে রইলাম বউয়ের দিকে। আহা মায়ের মতো মানসীও যদি একটা চড় মারে কী ভালই হয়!
Copyright © 2022 Rupkatha Live. All Rights Reserved. Powered by : Technotrick Systems.