অনুগল্প একাকী তারা রা
এও কি সম্ভব! বাড়ির ডাইনিং এ রুদ্ধশ্বাস আর বিস্ফারিত চোখে একটি চিঠি পড়ছেন মিসেস সেনগুপ্ত। সামনে বসে মি. ইন্দ্রনীল এক অজানা আশংকায় তাকিয়ে আছেন স্ত্রী র দিকে। বাড়ির পুরানো চাকর রামু দা লেটার বক্স থেকে খামসহ চিঠিটি এনে প্রথম তার হাতেই দিয়েছে।চিঠি পড়ে রাগে, ক্ষোভে এতোক্ষণ গুমমেরে বসেছিলেন।মিসেস সেনগুপ্ত বাড়িতে নেই।প্রায় দিনই ফিরতে রাত হয়। তবে আজ অনেকটা আগেই ফিরেছেন।
চিঠি পড়ে মিসেস সেনগুপ্ত রাগে কস্ কস্ করতে করতে সগোক্তি করে 'ও মাই গড'! তারপরেই ইন্দ্র কে বলে, হিয়া কে কিছু বলেছো?...না ...সবই কি আমাকেই বলতে হবে!... কেন! তুমিও তো ওর বাবা! মেয়েকে একটু শাসন করতে পারো না! ... আর তুমি! সারাদিন স্টার্ট... অ্যাকশন... কাট... প্রিমিয়ার, প্রডিউসার... পার্টি! এই নিয়েই ব্যস্ত... বাড়ি ফিরছো মাঝরাতে!...স্যাট আপ! ইন্দ্র, আমার দিকে আঙুল তোলার আগে একবার নিজেকে ভাবো!তুমি কতটা সময় দাও...! নিজের বিজনেসের বাইরে আর কিছু বোঝো! তাই এই রাত দুপুরে অযোথা সিন ক্রিয়েট কোরোনা!
ডাইনিং এর পাশেই হিয়ার রুম। পর্দার আড়াল থেকে ও সব লক্ষ্য করে।
দুশ্চিন্তার পাহাড় ক্রমশ উঁচু হতে থাকলো...হিয়াকে লেখা পর পর বেশ কয়েকটি লাভ লেটার ওদের হাতে এলো। একদিন মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো! চিঠির লেখায় যখন জানতে পারলো হিয়া পেগনেন্ট! হিয়া কে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো সুত্র না পেয়ে ওদের একমাত্র হাউস ফিজিসিয়ান ড. লাহিড়ীর সরণাপন্ন হলেন। ড. লাহিড়ীর কথা মতো প্রথমেই পেগনেন্সি টেস্ট করে রিপোর্টে দেখা গেলো নেগেটিভ। এবারে সত্যিই ভেঙে পড়লেন মিস্টার এন্ড মিসেস সেনগুপ্ত। ড. লাহিড়ী ও হতাশ!এখন শেষ আশা ভরসা একজন সাইক্রিয়াটিস্ট...
কাউনসিলিং চললো বেশ কয়েক দিন। অসাধ্য সাধন করলেন সাইক্রিয়াটিস্ট ড. ত্রিবেদী।
ওনার চেম্বারে অপেক্ষা করছেন মি. ইন্দ্র ও মিসেস সেনগুপ্ত। ড. ত্রিবেদী এসে বসলেন। সঙ্গে হিয়া। ইন্দ্রনীল কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। ওনাকে থামিয়ে দিয়ে... ভৎসনা করে বললেন, ছি! আপনারা ওর পেরেন্স বলে দাবি করেন! ছি ছি! আপনারা আপনাদের সোসাইটি তে এতোটাই ব্যস্ত যে শিশুকাল থেকে ওকে এভাবে নেগলেক্ট করেছেন! একাকিত্বের শত যন্ত্রণাতেও ও বিপথগামী হয়নি। শুধুমাত্র মা-বাবার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মনে মনে একটা গল্প সাজিয়েছিল। নিজেই একটি করে চিঠি লিখে লেটার বক্সে ফেলেছে। আপনারা মা বাবা হয়ে নিজের মেয়ের হাতের লেখাটাও চেনেন না!...প্লিজ! এখনো সময় আছে... এই নিস্পাপ ফুলের মতো মেয়েটাকে আর অন্ধকারে ঠেলে দেবেন না!
হিয়া জলভরা চোখে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় মা বাবার কাছে। মিসেস সেনগুপ্ত হিয়া কে বুকে টেনে নেয়... সঙ্গে ইন্দ্রও। রাতের অন্ধকার কেটে ক্যানভাসে আজ নতুন সূর্যের ভোর..
Copyright © 2022 Rupkatha Live. All Rights Reserved. Powered by : Technotrick Systems.