অনুগল্প

অনুগল্প চয়নের চিঠি

চয়নের চিঠি

লেখক : ড. আশিস কুমার নন্দী

আজকে হঠাৎ করে জীর্ণদীর্ণ একটা চিঠি বের করে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে পড়ছে মিতালী মুখার্জি। স্থানীয় স্কুলের প্রাক্তন হেডমিস্ট্রেস। কৈশোরে যৌবনে যিনি অসম্ভব সুন্দরী ছিলেন। বুদ্ধিমতী এবং পড়াশোনাতে ভীষণ মনোযোগী। সুতরাং চারপাশে কী হচ্ছে দেখার সময় কই? তবে আজ এই ষাটোর্ধ বয়সে চিঠিটা দেখার জন্য মনটা কেমন করে উঠলো। রাস্তায় চয়ন ঘোষ কি আড়চোখে দেখেছিল তাকে? বৌ'টার হাত ধরে রাস্তা পেরোতে গিয়ে বলছিল--    'সাবধানে। হাত ধরে থাকাটাও জীবনের একটা দিক।'

মিতালি মুখার্জি দম্ভের সাথে একদিন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এই চয়নের প্রেমপ্রস্তাব।বিদূষী সুন্দরী স্মার্ট। কলেজের কেউ সাহস পায় না তার সাথে কথা বলতে।চয়নের চিঠি পেয়ে হতভম্ব হয়ে গেছিলেন। রাগে চোখমুখ রক্তবর্ণ।মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোয়নি প্রায় মিনিট দশেক।তারপর লাভা উদগীরণ। তবে চিঠিটা ছিঁড়ে কুচিকুচি করতে গিয়ে কী যেন ভেবে রেখে দিয়েছিলেন।জীবনের প্রথম প্রেমপত্র ভেবে অনেকে রেখে দেয়,এক্ষেত্রে তো তা নয়,হয়তো চয়নের বদমায়েশির প্রমাণপত্র হিসাবে নাকি কে জানে!তারপর সময় গড়িয়েছে। অতি বড়ো সুন্দরী, বিদূষীর বিয়ে হয় নি, সবাইকে ক্যানসেল করতে গিয়ে।হঠাৎই কেমন যেন মনে হলো আজ--- চয়নের হাতটা কি ধরলে ভালো হতো? বৌ'টার ভাগ্যকে হিংসে হচ্ছে?বাড়িতে এসেই তড়িঘড়ি আলমারির গোপন কুঠুরি থেকে বের করলো বিবর্ণ চিঠিটা।আলো-আঁধারি অক্ষরগুলোয় চয়নের মুখ--সেই কলেজবেলার!মিতালি মুখার্জির বহুমূল্য কয়েকফোঁটা চোখের জল টপটপ করে ঝরে পড়লো চিঠিটার উপর!

Copyright © 2022 Rupkatha Live. All Rights Reserved. Powered by : Technotrick Systems.