প্রবন্ধ কলকাতা আছে কলকাতাতেই
আমার কলকাতা, তোমার কলকাতা, কল্লোলিনী কলকাতা৷ আবহমানকাল থেকেই বয়ে চলেছে৷ গঙ্গার উপকণ্ঠে৷ স্রোতের টানে৷ ১৬৯০ সালে সাহেব জব চার্নক এসেছিলেন, এই দেশে৷ বাণিজ্য করতে এসে কলকাতার প্রেমে পড়েছিলেন৷ আরও কত সহস্র বিদেশি আপন করে নিয়েছিলেন এই শহরকে৷ এই আদরের শহর কলকাতা এখনো ভালোবাসার শহর৷ চলছে নিজের আপন মনে৷
এই কলকাতা শহরেই আমার বাস৷ পচাঁত্তর বছর ধরে দেখছি৷ অবগাহন করছি--- বেঁচে আছি এই কলকাতায় শৈশবে দেখেছি ঘোড়ায় টানা গাড়ি, হাতে টানা রিকশা, রাজপথে বকনা বাছুরের মতো বিদেশি গাড়ির চলাফেরা--- ভেঁপু শব্দ করে ছুটছে শহরময়৷ ভোর হতেই রাস্তা ধুয়ে দিচ্ছে ভিস্তিওয়ালা, সূর্যাস্ত হলেই শহরময় আলোকোজ্জ্বল হচ্ছে গ্যাসবাতির ল্যাম্পপোস্ট৷ শহরের ফুটপাতে চলছে ন্যাংটো শিশুর স্নান- বিহারিদের পৈতে ধরে উলঙ্গ স্নান৷ গঙ্গার উপচে পড়া জলে৷ এ আমার প্রিয় শহর৷ কোটি কোটি লোকের শহর৷ বাইরে রাজ্য দক্ষিণ হোক৷ কিংবা বিহার, ওড়িশা অথবা সূদূর পাঞ্জাব রাজস্থানের লোক হোক৷ সবাইকে ঠাঁই দিয়েছে অথবা সুদূর পাঞ্জাব রাজস্থানের লোক হোক৷ সবাইকে ঠাঁই দিয়েছে কলকাতা৷ এরা আপন করে নিয়েছেন এই শহরকে৷ তবু নিন্দুকরা বলছেন, ঘৃণার শহর, নোংরা শহর, ঘিঞ্জি শহর, বিষময় শহর, জঞ্জালের শহর৷ প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি এই শহরকে আকস্মিকভাবে মৃত শহর বলে আখ্যা দিলেন কয়েক দশক আগে৷ কলকাতাকে নিয়ে কত বিদ্বজন৷ তাঁদের মতামত দিয়েছেন, ব্যঙ্গ করেছেন আবার সুখ্যাতিও করেছেন৷ যেমন, আজ থেকে প্রায় আড়াইশো বছর আগে কবি সাংবাদিক ঈশ্বর গুপ্ত তাঁর সংবাদপত্রে ‘সংবাদ প্রভাকর’-এ (প্রথম দৈনিক কাগজ এদেশে) ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ১৭৩৯ সালে৷
‘রেতে মশা, দিনে মাছি
এই তাড়য়ে কলকাতায় আছি৷’
এ প্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন, ‘কথিত আছে ঈশ্বরচন্দ্রের যখন মাত্র তিনবছর বয়স, তখন তিনি একবার কলিকাতায় মাতুলালয়ে আসিয়া পীড়িত হয়েন৷ সেই পীড়ায় তাঁহাকে শয্যাগত হইয়া থাকিতে হয়৷ কলিকাতা তৎকালে নিতান্ত অস্বাস্থ্যকর ছিল এবং মশা-মাছির উপদ্রব ছিল৷ প্রবাদ আছে, ঈশ্বরচন্দ্র শয্যাগত থাকিয়া সেই মশামাছির উপদ্রবে একদা স্বতঃই আবৃত্তি করতে থাকেন৷’
হ্যাঁ ঈশ্বর গুপ্ত ঠিকই কটাক্ষ করেছিলেন সেইসময়৷ এখনো এ শহর থেকে ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গুর উৎপাত চলছে সমানতালে৷ ঠেকানো যায়নি৷ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে তারা (মশা-মাছিরা) দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহরে শহরের উপকণ্ঠে৷
কিন্তু এক দশক পরেও কলকাতা নিজগুণে মহিমান্বিত৷ যে যাই বলুক না কেন?তা নাহলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আমায় মাত্র কোটি লোক এই শহরে ভিড় জমাচ্ছেন কেন? এ জনস্রোত অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চলেছে৷ কলকাতার মধ্যে প্রাণ আছে বলেই তো, নিষ্প্রাণ মোটেই নয়৷ বহিরাগতরা বলেন, প্রাণের শহর, উদ্দীপনার শহর৷ সারা ভারতের গুণীজনেরা বলেন, ‘এখানে না আসলে আমরা সমাদৃত হই না৷ কলকাতা গুণীকে সমাদর করতে জানে৷ কলকাতার মতো দর্শক-রসিক লোক ভূভারতে নেই৷ তাঁরা এই মৃত শহরেই আসতে চান একটু তারিফ পাওয়ার জন্য৷ এখানে এসে খ্যাতিলাভ করেছেন সঙ্গীতজগতের দিকপালরা৷ গুণীজনরা বলেন, ‘কলকাতা সম্মান করতে জানে৷ এই কথা বলেছেন, প্রখ্যাত গায়ক আমির খাঁ, বড়ে গোলাম আলি, বিলায়েৎ খাঁ, তবলাবাদক আমজাদ, মহাপুরুষ মিশ্র, কেয়ামতুল্লা সাহেব, সরোদবাদক আমজাদ আলি খাঁ, সাম্প্রতিককালের কণ্ঠশিল্পী রশিদ খাঁ ও আরও অনেক শিল্পী৷ এঁরা প্রায় সকলেই ভালোবাসার টানে ‘কলকাতাকে’ নিজের বাসস্থান করেছেন৷ অনেকে আবার কলকাতাতেই সংসার পেতেছেন৷ ফুটবলের মক্কা এই শহর৷ ফুটবল মানেই কলকাতার গড়ের মাঠ৷ ভারতের সেরা ফুটবলাররা এখানেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন৷ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হয়েছেন৷ আশ্রয় নিয়েছেন কলকাতায়৷ বলরাম- ভেঙ্কটেশ-নৈমউদ্দিন, গুরুবক্স সিং, হানি সিং প্রমুখ৷ এমনকি ক্রিকেটের প্রসন্ন-অরুণলাল৷ এরকম অনেক ফুটবলার আছেন৷ যাঁরা, কলকাতাকে নিজের শহর মনে করেন, শুধু তাই নয়, সুদূর ইরান থেকে খেলতে এসে জামশেদ নাসিরি কলকাতায় স্থায়ী বসবাসের জায়গা করে নিয়েছেন৷ তবু কলকাতা মিছিলের শহর, যানযটের শহর, ভিক্ষুকের শহর, কেবল চিৎকার করে আকাশ ফাটায় কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না৷ সেই চিৎকারধ্বনি বাম আমল থেকে এখনো অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চলেছে৷ তবে কেন সারা ভারতের লোকেরা ভিড় জমাচ্ছে এই শহরেই৷ আশ্রয় নিয়েছে চিরস্থায়ীভাবে৷ জীবিকার সন্ধানে কী? এ শহর বহু ভাষাভাষীর, বহু ধর্মের সহাবস্থান৷ কোনো ভেদাভেদ নেই, জাতিভেদ নেই--- সকল সম্প্রদায়ের লোক কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে চলে৷ সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে এ শহর৷
তাই সারা ভারতে মাথা তুলে আছে আজও৷ সবারই মিলনক্ষেত্র এ শহর৷ ফারসি লেখক ডোমিনিক ল্যাঁপিয়ে তাঁর ‘সিটি অব জয়’ বইতে দিয়েছেন এক অনবদ্য রূপ কলকাতার৷ তিনি মুগ্দ হয়েছেন, কলকাতার চালচিত্র দেখে৷ এখানে কষ্ট আছে, দুঃখ আছে, সঙ্গে আছে অনাবিল আনন্দ৷ এ এক অনন্য শহর৷ কত দশক আগে ভগিনী নিবেদিতা আমেরিকা থেকে এসেছেন, এই শহরে৷ আর্তদের সেবা করতে, নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে, এসেছেন মাদার টেরিজা৷ দুজনেরই একই মন্ত্র, ‘জীবে প্রেম করে যে জন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর’৷ তাঁরা এই শহরকেই বেছে নিয়েছেন আজীবন৷ উৎসর্গ করেছেন নিজের জীবনকে৷ আবার রাশিয়া থেকে এসেছেন লেবেডেফ সাহেব৷ দেশীয়দের নিয়ে গঠন করেছেন নাট্যমঞ্চ৷ ভারতে প্রথম নাট্যমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয় এখানেই৷
কলকাতা হুজুগের শহর৷ আধুনিকতার শহর ও বিপ্লবী ডিরোজিও সাহেবের শহর৷ পকেটে পয়সা না থাকা সত্ত্বেও ইডেন গার্ডেন উপচে পড়ে--- গড়ের মাঠ কিংবা যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন জনজোয়ারে ভেসে যায়৷ যত দামি টিকিট হোক না কেন, এক মিনিটে নিঃশেষিত৷ চারদিকে বলে টিকিটের হাহাকার৷ এই তো সেদিন অনামজাদা এক গায়ক, গাইতে এসে নজরুলমঞ্চ ভেঙে পড়লো৷ পণ্ডিত রবিশঙ্কর একবার ঘরোয়া এক অনুষ্ঠানে বর্তমান লেখককে বলেছিলেন, ‘বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশে সেতার বাজিয়েছি, কিন্তু প্রত্যেক বছরই মুখিয়ে থাকি কবে কলকাতায় কনসার্ট করবো৷ এখানকার মজাই আলাদা৷ এরকম দর্শকঠাসা অডিটোরিয়াম পৃথিবীর কোথাও নেই৷’ ভি.জি. যোগ সাহেব ও ওস্তাদ আল্লারাখাও একথা বহুবার বলেছেন৷ তাঁরা বলেছেন কলকাতা সংসৃকতির পীঠস্থান৷ কলকাতা আড্ডা বিশ্বখ্যাত৷ যদিও শোনা যায় ফরাসিদের সঙ্গে নাকি অনেক মিল৷ প্যারিসের যুবকরাও নাকি খুব আড্ডাবাজ৷ যেমন উত্তর কলকাতার আড্ডা রকে বসে, দক্ষিণ কলকাতার আড্ডা চায়ের দোকানে৷ বলা হয় বাঙ্গালদের আড্ডা৷ মধ্য কলকাতায় সারাদিনের আড্ডা চলে কফি হাউসে৷ এখানকার আড্ডা আঁতেলদের৷ রাজনীতি- খেলাধূলা-কবিতা-সাহিত্য সবই আড্ডার বিষয়বস্তু৷ আড্ডায় লড়াই চলে ঘটি-বাঙাল, উত্তমকুমার-সৌমিত্রকে নিয়ে৷ আবার দুই সাংবাদিক অজিতাভ চৌধুরী বনাম অমিতাভ চৌধুরীকে নিয়েও৷ কলকাতায় আড্ডাও আছে গাড্ডাও আছে৷ বর্ষার সময় এই শহর গাড্ডায় পরিপূর্ণ৷ কাগজে-পত্রিকায় সমালোচনার ঝড়৷ কিন্তু নিন্দুকরা এমন ঝড় তোলেন, কলকাতা যেন ডুবতে বসেছে৷ কেউ বলেন ডুবন্ত শহর, কেউবা বলেন পচা শহর৷ আরে বাবা, এরকম বন্যা তো প্যারিসে-লন্ডনে-জার্মানিতেও হয়৷ আবার দিল্লি-মুম্বাই-চেন্নাইতে হয়৷ প্রত্যেক বছরই৷ আসলে যত দোষ নন্দঘোষ৷ যাঁরা কলকাতার ঘিঞ্চি শহর-যানজটের শহর বা বস্তির শহরের ওপর ডকুমেন্টারি ছবি তুলে পুরস্কার পাচ্ছেন তাঁরাও অন্য শহরকে নিজের শহর বলে মনে করেন না৷ তাঁরা এই শহরে ফিরে আসতে পেরে গর্ববোধ করেন এবং পুরস্কার হাতে ছবি তোলেন কলকাতার দর্শকদের সঙ্গে৷
শহর সাক্ষী থেকেছে পঞ্চাশ দশকের৷ এক পয়সা ট্রামের ভাড়া নিয়ে আন্দোলনের (১৯৫৩) রক্তঝরা দিন৷ খাদ্য আন্দোলনের রক্তাক্ত সংগ্রাম--- ট্রাম-বাস পুড়িয়ে প্রতিবাদ যুব সমাজের৷ প্রত্যক্ষ করেছে রক্তাক্ত শ্রেণীহীন সংগ্রাম৷ মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়ের কাঁচকলা খাওয়ার উপদেশ৷ দেখেছে কলকাতা চব্বিশ ঘণ্টা, বাহাত্তর ঘণ্টার ধর্মঘট-বনধ, অচল জনজীবন-সমাজজীবন৷ এখনও আবার কলকাতা দেখতে পাচ্ছে অচল-শিষ্টি-শিক্ষা সীমাহীন বেকারদের শোভাযাত্রা৷ শহর ছাড়ার হিড়িক৷ কারও হেলদোল নেই৷ লালে লাল কলকাতা আর নেই৷ তবু কলকাতা এগিয়ে চলে দিশাহীন পথে৷ চারদিকে আলোর ছটায় শহর নতুন সাজে সজ্জিত৷ কেউ মনে রাখেনি বিদ্যাসাগরের রাস্তার গ্যাসলাইটে পড়াশুনা৷ রামমোহনের সমাজসংস্কার, বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্য কিংবা মাইকেলের বিদেশ থেকে চলে আসা কলকাতার সনেট৷ শহরের বুকে এসপ্ল্যানেডে রবীন্দ্রনাথের বৈঠকি আড্ডা৷ এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা অবশ্যই দাবি করতে পারেন, শহরকে মনীষীদের কুৎসিত মূর্তি দিয়ে কেমন সাজানো হয়েছে৷ দেখুক বাইরের লোকেরা৷ কলকাতাবাসীর গর্ব-কলকাতার গর্ব রবিঠাকুর থেকে সত্যজিৎ-রবিশঙ্কর চিনিয়েছেন কলকাতাকে বিশ্বের দরবারে৷ রবিশঙ্কর সারা পৃথিবী ঘুরে এসে কলকাতার তাঁর রাতজাগা সেতারবাদন, কিংবা ভি.জি. যোগসাহেবের ভৈবর রাগের বেহালাবাদন কলকাতার সকাল৷ মাতিয়ে দিয়েছেন কলকাতাবাসীকে৷ আমরা বেঁচে আছি--- মেতে আছি, কলকাতার গড়ের মাঠ, ইডেনকে নিয়ে৷ লক্ষ লক্ষ দর্শকের চিৎকারধ্বনি ও করতালিতে৷ এসব নিয়েই আমরা কলকাতাবাসী৷ যাঁরা গোঁসা করে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন ক্ষোভে হতাশায়--- তাঁরা বাধ্য হয়ে বলতে শুরু করেছেন, আর ভালো লাগছে না, কলকাতায় ফিরে আসতে চাই৷ স্বস্তিতে থাকতে চাই, আমার শৈশবের কলকাতায়৷
খেয়াল করে দেখুন না, যারা শারদোৎসবের প্রাক্কালে বাইরে চলে যাচ্ছেন, তল্পিতল্পা নিয়ে, কটাক্ষ করছেন এই সময়ে কলকাতায় থাকা যায় না, ফিরে এসেই কৌতূহলী প্রশ্ণে জিজ্ঞাসা করছেন এবার উৎসব কেমন কাটলো৷ এইতো একটা সময় শহর কলকাতা সেজে ওঠে, নানারূপে নানা সাজে৷ ঝলমল করে ওঠে চারদিকে৷ আনন্দে ভরপুর হয় এ-শহর৷ সুদূর ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ভিড় জমায় এই শহরে, নানাভাষা-নানাজাতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এক নতুন বিশ্ব৷ সেইজন্যই তো আজ কলকাতা আন্তর্জাতিক শিরোপায় উজ্জ্বল ও ব্যতিক্রমী৷ এটাই তো ‘কালকুটার’ মহিমা৷ যাঁরা প্রবাসী তাঁরা ছটফট করেন এখনো কবে শহরে পা রাখবেন৷
তবুও কলকাতার বদনাম ঘোঁচেনি৷ একবার পাশের রাজ্য ত্রিপুরাতে গিয়েছিলাম পুজোর প্রাক্কালে৷ আগরতলায়৷ কথা হলো, ছিন্ন-বস্ত্র পরিহিত এক রিকশাওয়ালার সঙ্গে৷ ‘আগরতলাটা একটু ঘুরিয়ে দেখাবে নাকি!’ সে বললো, ‘একশো টাকা লাগবো, বাবুরা কলকাতা থিকা আসছেন বুঝি৷’
বললাম, ‘হ্যাঁ৷’
সে তৎক্ষণাৎ বলল, ‘ওরে বাবা, কলকাতা তো বাটপারের (প্রতারকের) জায়গা, একবার কলকাতায় গেছিলাম, বাটপারের পাল্লায় পড়ছিলাম৷ কোনোক্রমে পালাইয়া আইছি৷ নমস্কার কলকাতা৷’
বললাম, ‘আমরা এইখানে বাটপারের পাল্লায় পড়ি নাইতো---’
কলকাতার সুনাম-বদনাম সবই আছে৷ তবে এখন কলকাতা নির্বাক৷ হারিয়ে গেছে মিছিলের শহর, প্রতিবাদের শহর, বোমাবাজির শহর৷ লাল ঝাণ্ডার শহর৷ ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, ইনকিলাব জিন্দাবাদ ধ্বনি অস্তমিত৷ কলকাতা এখন নীরব দর্শক৷ লক্ষাধিক লোকের ক্রন্দনধ্বনি শোনা যায় না৷ ক্ষুধার্ত মানুষের নির্মম আর্তনাদ আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হয় না৷ বাংলা ভাষা বিদায় নিয়েছে৷ শহর এখন বহিরাগতদের করায়ত্বে৷ তারা দখল নিয়েছে ভবিষ্যতের কলকাতা৷
সেই কবে সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর বলেছেন, ‘আমি আতঙ্কিত হচ্ছি, শেষপর্যন্ত না কলকাতায় হনুমানের উৎপাত বাড়ে৷ বজরঙ্গবলীরা যেভাবে সারা দেশে এগুচ্ছে, গণতন্ত্র লোপাট হবে সন্দেহ নেই৷
কলকাতা চলছে তোলাবাজ-মাফিয়াদের নির্দেশে৷ দিদি চলে গেছেন গঙ্গার ওপারে৷ জোর যার মুলুক তার৷ তবু আমার কলকাতা৷ আমরা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছি, কখন একটু আড্ডা মারবো৷ গুলতানি-আড্ডা মারার লোকের যে বড্ড অভাব৷ কৈশোরের স্মৃতিকে জাপটে ধরে আছি এই কলকাতায়৷
স্বরচিত ব্যঙ্গ ছড়ার কয়েকটা লাইন দিলাম :
‘দেখতে পাবে কলকাতাতে চলছে মানুষ ঝড়ের বেগে,
নরম মানুষ, গরম হয়ে কথায় কথায় যাচ্ছে রেগে,
বাদুর ঝোলায় ঝুলছে মানুষ জীবন-মরণ সমস্যাতে,
সড়কগুলো নরক হয়ে পাতাল হচ্ছে বর্ষাতে৷
সবুজ মানুষ অবুঝ হয়ে দিচ্ছে সময় রাজনীতিতে
কায়দা করেই বাঁচছে মানুষ মগের মুলুক কলকাতাতে,
বুজরুগিতে ভরে গেছে সব মন্ত্রীরা থাকেন আহ্লাদেতে৷’
অযথা শঙ্কিত হবেন না৷ কল্লোলিনী কলকাতা একদিন অচিরেই লন্ডন হয়ে যাবে৷
Copyright © 2022 Rupkatha Live. All Rights Reserved. Powered by : Technotrick Systems.