অনুগল্প বাসা বদল
আমার শৈশব কেটেছিল গ্রামে। হৈ চৈ করে ছেলেবেলার দিনগুলো কেটে যেত সেখানে। জেঠতুতো ভাই বোনদের সাথে খুনসুটি করা, খড়ের গাদার আড়ালে লুকোচুরি খেলা।
পরে এই শহরতলিতে। এ বাড়িটা বেশ ভালই। দখিণ-পুব খোলা। রোদ্দুর হাওয়াবাতাস অফুরন্ত। দোতলা বাড়ি। ছাদে ফুলের বাগান, মার ঠাকুরঘর। রাস্তার উলটো দিকে জোড়া পুকুর। হাঁসেরা চড়ে বেড়ায়, পানকৌড়ি টুপ্টাপ ডুব দিয়ে গুগলি ঝিনুক খোঁজে, ছেলেরা হৈ চৈ করে সাঁতার কাটে।
হঠাৎ একদিন ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়ে মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। বাবা নিচে একা হয়ে গেলেন। আমার স্ত্রী সেঁজুতি সব সময়ই বাবার কাছে কাছে থাকত। বন্ধুবান্ধবরা বলল তোরা একটা লিফট্-ওলা বাড়িতে শিফট্ কর।
ইতিমধ্যে বাবার শরীরটা খারাপ হতে শুরু হতে করল। বাবা পৃথিবীর সব মায়া শেষ করে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম পুরনো দিনের নানান কথা। সময়ে অসময়ে উপদেশ নেওয়ার শেষ জায়গাটুকুও আজ হারিয়ে গেল। দূরে নীল আকাশের নক্ষত্ররাশির দিকে তাকিয়ে বিশ্বচরাচরে নিজেই যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম। শরীরও বাসা বদল করে। বাসা বদল করে বাবা হয়ত এখন ওই তারাদের মাঝেই কোথাও লুকিয়ে আছেন। যারা চলে যায় তারা ফেলে রেখে যায় অসমাপ্ত কবিতা, বলে যায় না শেষ কথা !
আমার দু’চোখ দিয়ে গড়িয়ে নামছিল শ্রাবণের ধারা। কতক্ষণ যে একা এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না। হঠাৎ কাঁধের ওপর আলতো হাতের স্পর্শে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। পেছনে দাঁড়িয়ে সেঁজুতি।
Copyright © 2022 Rupkatha Live. All Rights Reserved. Powered by : Technotrick Systems.